দিব্যেন্দু গোস্বামী ,বোলপুর-২৪শে ডিসেম্বর:
ঐতিহ্যশালী পৌষমেলা শুরু হয়ে গেল বীরভূমের বোলপুর শহরে। বহু বছর ধরে এই পৌষমেলাকে কেন্দ্র করে শান্তিনিকেতন যেন আবারও নতুন প্রদর্শনীর জায়গা হয়ে ওঠে। বিগত চার বছর ধরে পূর্বপল্লীর মাঠে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি জেলা প্রশাসন এবং শান্তিনিকেতন কর্তৃপক্ষের মতান্তরের ফলে। এবার সেই পুরাতন জায়গায় বসেছে রবি ঠাকুরের সাধের পৌষমেলা। মেলার উদ্বোধন হয়ে গেল । চলবে ছদিন অর্থাৎ তিরিশে ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেলায় আগত দর্শনার্থী এবং মেলায় আগত শিল্পীদের কথা মাথায় রেখে এবার মেলা চার দিনের পরিবর্তে ছয় দিন করা হয়েছে।
অর্থাৎ দুদিন আরো বাড়ানো হয়েছে। সকালে বৈতালিকের মধ্য দিয়ে পৌষ মেলার সূচনা হয়। এর পরে বীরভূমের লোকসঙ্গিত বাউল গান পরিবেশিত হয়। মেলার আকর্ষণ প্রধানত তিন ভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। একদিকে খাবার দাবারের ব্যবস্থা যেখানে আপনি পাবেন বিভিন্ন পিঠে জাতীয় খাবার। শীতকালে বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় পিঠে। গ্রাম্য উৎসব হয়ে থাকে পিঠেপুলির হাত ধরে। কিন্তু শহর থেকে আগত অনেকেই আছেন তারা পিঠে কি জানেন না। তাদের কাছে এই খাবার অত্যন্ত সুমিষ্ঠতা প্রদান করে। দ্বিতীয়তঃ এখানকার শিল্পীদের হাতের তৈরি জিনিস পত্র। মাটির তৈরি গহনার এতটাই কদর যে দূর দূরান্তের মানুষজন তা কিনতে বেশি আগ্রহ দেখান। তাদের হস্ত শিল্পের কদর দিয়ে চড়া দামেও কিনে বাড়ি নিয়ে যায়। কি অবিস্মরণীয় এই হস্তশিল্প। যেখানে সুতো থেকে বেত সব ধরণের জিনিস পাওয়া যায় যা অত্যন্ত লোভনীয়। মেলায় আগত দর্শনার্থী ওই সমস্ত জিনিস কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। তৃতীয় ভাগে অবশ্যই মেলার আকর্ষণ বিভিন্ন প্রকার আতশবাজি প্রদর্শন। যদিও এটি মেলার শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় তবুও এই আতশবাজি দেখার জন্য ভারতের বিভিন্ন জায়গার মানুষ থেকে যায় এই বোলপুরেই। তার সঙ্গে সঙ্গেই বোলপুরের পৌষ মেলায় নাগরদোলা থেকে নৌকা বিহার সবকিছুই রয়েছে এখানে যা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে আকর্ষণ করে। এবার শান্তিনিকেতন পৌষ মেলায় মোট ১৫০০ টি টল রয়েছে। মেলায় প্রায় প্রতিদিন ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার দর্শক সমবেত হন। তাই নিরাপত্তার দিক খতিয়ে দেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অগ্নি নির্বাপনে বিশেষ বন্দোবস্ত করা হয়। মেলা যদিও ছয় দিনের তবুও এই মেলাকে উপভোগ করতে দূর-দূরান্তের মানুষ ছুটে আসেন এই সময়। তাদের থাকার বন্দোবস্ত করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাদের গেস্ট হাউসে লোক সমাগম এতটাই হয় যে সেখানে সবাই একসঙ্গে থাকতে পারেন না। যার জন্য বোলপুর শহরে মধ্যে থাকা হোটেলগুলিকে বুক করেন বলা যেতে পারে। এই সময়ে চড়া দামে ওই সমস্ত হোটেল মালিকরা বাড়ি ভাড়া দেন। একটি রুমের ভাড়া নিতে গেলে এক হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। চড়া দামে হোটেলে থাকলেও স্বভাবতই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা এবার জমজমাট আকার ধারণ করেছে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।