অরণ্য,ঝাড়গ্রাম- ১৭ই নভেম্বর:
বাংলার ঘরে ঘরে পরবের শেষ নেই, তেমনই গরু খুটান।স্পেনের বুলফাইটিং এর সাথে মিল আছে গরু খুটানের। তবে সেখান কার মত নৃশংস নয়। গরু,ষাঁড়, মহিস কে স্বক্রিয় রাখতে তাদের পুজা করে খেলানো হয় বাঁদনা পরবে। বাঁদনা পরবে মেতে উঠেছে ঝাড়গ্রাম সহ গোটা জঙ্গলমহল। কালীপুজোর অমাবস্যার রাত থেকে রীতি মেনে শুরু হয় এই পরব। কুড়মি জনজাতি অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম সহ গোটা জঙ্গলমহল এমনকি ঝাড়খণ্ড, বিহার,ওড়িশা এলাকায় প্রাচীনকাল থেকে নিজস্ব নিয়ম রীতি মেনে এই পরব পালিত হয়ে আসছে।
কৃষি কেন্দ্রিক এই বাঁদনা পরবে গোমাতাকে ভগবতী রূপে পুজো করা সহ চাষের লাঙ্গল , জোঁয়াল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সহ গোয়াল ঘরে পুজো করা হয়। অমাবস্যার পাঁচ দিন বা এক সপ্তাহ আগে থেকে গরুকে স্নান করিয়ে প্রতিদিন বিকেলে তাদের সিং এ তেল মাখানো হয়। অমাবস্যার বিকেলে মাঠে গ্রামের সমস্ত গরু জড়ো করে "গোঠ ডিঙানো" আচার পালন করা হয়। রাতে সারারাত গোয়ালে প্রদীপ জ্বালিয়ে গরুকে ঘাস খেতে দেওয়া হয়। অহিরা গীত ও ঝাঁগোড় নাচ দিয়ে চলে ঘর জাগানো। পরের সকালে তুলসী তলায় চাষের কাজে ব্যবহৃত লাঙ্গল মই প্রভৃতিকে ধুইয়ে নতুন ধানের মোড় পরিয়ে পুজা করা হয়। এইদিনই হয় গোয়াল পুজো। এর পরে গ্রামে গ্রামে গরু খুঁটান পর্ব দিয়ে শেষ হয় বাঁদনা পরব।কুড়মি জনজাতির যে কয়েকটি পরব রয়েছে এটি তার মধ্যে অন্যতম। বহু বছর আগে বন্য হিংস্র পশুদের মোকাবিলার জন্য ষাঁড় জাতীয় গরু কাড়া( পুরুষ মহিষ) আলাদা করে পালন করা হত। কার ষাঁড় কত বেশি শক্তিশালী ও প্রতিরোধে সক্ষম তাই যাচাইয়ের জন্য বাঁদনা পরবে "ডাহরা খেলার" আয়োজন হত। যার পরিবর্তিত রূপ এই সময়ের গরু খুঁটান। প্রাচীন রীতি মেনে বৃহস্পতিবার বিকালে সাঁকরাইল ব্লকের কুলটিকরী গ্রাম পঞ্চায়েতের আহিরা গ্রামে আহিরা আদিবাসী শিব শংকর ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাঁদনা পরব অর্থাৎ গরু খুঁটান উৎসব। জঙ্গলমহলের ঐতিহ্যবাহী পরব বাদনা পরব। এদিন গ্রামের মহিলা পুরুষ সবাই শোভাযাত্রা সহকারে গ্রামের একাধিক নির্বাচিত গরুকে খুঁটিতে বেঁধে উৎসবে মাতেন। এদিনের এই গরু খুঁটান উৎসবে ১৫ টি গরুকে অংশগ্রহণ করারো হয়। প্রথম স্থান , দ্বিতীয় স্থান ও তৃতীয় স্থান অধিকার করা গরুর মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিধায়ক ডাঃ খগেন্দ্রনাথ মাহাতো।