অরণ্য,ঝাড়গ্রাম-৬ই অক্টোবর:
গোটা এলাকায় গুড়ু গুড়ু আওয়াজ। হালকা কম্পন। এলাকার লোক সজাগ হয়ে যায়। ছুটে আসে গরামথানে। দেহুরী অর্থাৎ পুজারি জল, সরবৎ, পাখা গামছা নিয়ে ছুটে আসেন। মন্দিরে থাকা বাবা ভৈরব এর ঘর্মাক্ত শরীর মুছে দেন গামছা দিয়ে। পাখার হাওয়া করে তাকে ঠান্ডা করা হয়। খাওয়ানো হয় সরবৎ। হ্যাঁ এটা ঝাড়গ্রামের শিলদা এলাকার ওরগোন্দা মন্দির এর ঘটনা। যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে ঘাটশিলায় মা রুঙ্কিনী দেবী মন্দিরের সাথে এই মন্দিরের পাতাল যোগ আছে। আর মাঝে মাঝে যখন তাঁরা যাতায়াত করেন তখন এরকম আওয়াজ হয়। যদিও এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আলাদা।
এই ওরগোন্দর মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। সারা বছর এখানে অব্রাহ্মণ রাই পুজো করেন। এমনকি দূর্গাপুজোর সময় ও পুজো করেন তারাই। শুধু মাত্র মূর্তি বদলের সময় পুজো,চন্ডিপাঠ করেন ব্রাহ্মনরা। এখানে পুজোর দিন গুলো মায়ের আরাধনা হলেও দশমীর দিন বিশেষ পুজার আয়োজন হয়। দশমী একাদশী এখানে কয়েক লাখ ভক্তের সমাগম হয়। দশমীর দিন সর্বসাধারন এর পুজা হলেও একাদশীর দিন মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে ভিড় করেন। একে বলে পাটাবিঁধার মেলা। আসাম, উড়িস্যা, ত্রিপুরা, সহ একাধিক রাজ্য থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ভিড় করেন। চলে পুজা, বলি, নাচ, গান। মূলত ঐ সময় মুরগী, পাঠা বলি দেওয়া হয়। কথিত আছে বিশ্বকর্মার উপর ভার পড়েছিলো এই মন্দির গড়ার। সময় একরাত। সেই একরাতের মধ্যে বিশ্বকর্মা ঝামাপাথর দিয়ে মন্দির তৈরী শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভোর হওয়ার আগেই মুরগী ডেকে ওঠায় ভোর হয়ে গেছে ভেবে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মন্দির আর সমাপ্ত হয়না। যতটা হয়ে ছিলো সে আবস্থায় পুজা শুরু হয়।বাবা ভৈরবের। ভৈরব যেহেতু শিবের রনং দেহী মূর্তি তাই মাটির কলসের মূর্তির রনংদেহী। বাকি হাতি,ঘোরা , প্রকৃতিকে পুজো করা হয়। যেহেতু মা রুঙ্কিনীর যাতায়াত আছে তাই দূর্গাপুজাও হয় ধূম ধাম করে।